জহিরুল ইসলাম প্রতিবেদক

বিডি-অনলাইনম ম্যাগাজিন ডটকম

Published 27 Apr 2023. 3.30 am

২২ জানুয়ারি ভোরে হানিফ ফ্লাইওভারে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। সেদিনই সন্ধ্যায় তার ছেলে মর্গে গিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করে জানায় ৫০ বছর বয়সি মহির উদ্দিন এক মাছ বিক্রেতা। কিন্তু মারলো কে?

এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব পান যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই বিলাল আল আজাদ। টানা পাচ দিন লেগুনা চালকের হেল্পার সেজে তদন্ত চালিয়ে সেই খুনের রহস্য উদঘাটন করেন তিনি। ধরা পড়ে হত্যায় জড়িত চার ছিনতাইকারী। মনে হল যেন কোন মুভির কাহিনী। সে এইরকম অনেক মামলা রহস্য উদঘাটন করেছেন। এস আই বিলাল আল আজাদ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। আরও একটি মামলা রহস্য উদঘাটন করেন।

ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনের নির্জন এলাকায় গত ১৩ মার্চ অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণের মরদেহ পড়ে ছিল। তার গলায় ছিল গামছা পেঁচানো। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে মিরাজ হোসেন নামে পরিচয় শনাক্ত হলেও খুনি চিহ্নিত করতে পারছিল না পুলিশ। গত ৩ এপ্রিল একই জায়গায় মেলে অজ্ঞাতপরিচয়ে আরেক ব্যক্তির লাশ! হত্যার ধরনও অভিন্ন। এতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, নিহত দুজনই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। তাদের হত্যা করে দুর্বৃত্তরা রিকশা ছিনতাই করে।

ডেমরা থানা পুলিশ জানায়, ১৩ মার্চ লাশ উদ্ধারের পর তদন্ত চলছিল। এক মাসের মধ্যে একই জায়গায় লাশ পাওয়া যায়। আঙুলের ছাপ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম স্বপন ইসলাম। ৩৫ বছর বয়সী স্বপনও রিকশাচালক ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তদন্তে বেরিয়ে আসে নারায়ণগঞ্জের রিকশা ছিনতাইকারী একটি চক্র চালককে হত্যা করে রিকশা নিয়ে যায়। এর পর ওই চক্রের সদস্য মো. নাইম ও জাহিদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে দুটি হত্যার কথাই স্বীকার করে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি জিয়াউল আহসান তালুকদার জানান, একই জায়গা থেকে দুই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ঘাটনের পর ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তার মাধ্যমে খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রটি যাত্রী সেজে অটোরিকশা টার্গেট করে। এরপর ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনের নির্জন এলাকায় নিয়ে চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেয়। চক্রে আরও সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার উপপরিদর্শক বিলাল আল আজাদ জানান, গ্রেপ্তার নাইম ও জাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে রিকশা ছিনতাইয়ের কৌশল থেকে খুন পর্যন্ত বিস্তারিত জানিয়েছে। ২ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ওই দুজন ছাড়াও নয়ন, রায়হানসহ চারজন ছিনতাই করার জন্য একটি অটোরিকশা নিয়ে যাত্রাবাড়ী যায়। যাত্রাবাড়ী থানার পেছনে লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে একটি অটোরিকশাকে টার্গেট করে তারা। টার্গেট করা রিকশাটি আমুলিয়া থেকে গাড়ির পার্টস আনার জন্য ২০০ টাকা দিয়ে আপডাউন ভাড়া করে। সেটিতে নয়ন ও নাইম বসে। পেছনের রিকশায় জাহিদ ও রায়হান ফলো করতে থাকে। আমুলিয়া মডেল টাউনের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে চালককে নামিয়ে নয়ন চালক স্বপনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে রিকশার চাবি দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। চালক তাতে রাজি না হওয়ায় ইট দিয়ে চালকের মুখে, চোখে ও মাথায় আঘাত করে এবং গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে রিকশাটি নিয়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে তা নিজেরা ভাগ করে নেয়।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, একই জায়গায়, ১৩ মার্চ একই ধরনের খুন হওয়ায় গ্রেপ্তার দুজনকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ওই সময় রিকশাচালককে খুন করে সেটি ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে আরও কয়েক সদস্যের নাম জানায়। আসামি নাইম ও জাহিদ আদালতেও স্বীকারোক্তি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *