নিজস্ব প্রতিবেদক বিডি-অনলাইন ম্যাগাজিন ডটকম
Published 20 sep,2023,2.30 AM

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা এলাকার ৩২.৫০ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন আব্দুস রশিদ নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, সাবেক এমপি কাজী আব্দুল কাদেরের মালিকানাধীন ওই জমির আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) তিনি। জমি বেদখল হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি দখলদারদের উচ্ছেদের আবেদন করেন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য। যার পরিচয়ে তিনি জমি দাবি করছেন, সেই আব্দুল রশিদ (দু’জনের নামের বানান আলাদা) ১৯৯৬ সালে মারা গেছেন।
এদিকে বয়স হিসাব করলে দেখা যায়, মাত্র ১৩ বছর বয়সে আব্দুস রশিদ আমমোক্তার নিযুক্ত হন। যদিও নাবালক অবস্থায় তা হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া তাঁর দাবি করা জমি অনেক আগেই বিক্রি করেছিলেন প্রকৃত মালিক। বর্তমানে ওই জমির বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

জমির একাংশের বর্তমান মালিক ও মামলার বাদী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম সমকালকে জানান, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশের এমপি কাজী আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে কেনা ৩২.৫০ শতাংশ জমির মালিক তিনি ও তাঁর ভাই জহিরুল ইসলাম। পরে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করায় এখন তাঁদের জমি অবশিষ্ট আছে ১৪.৯৭ শতাংশ। তবে আব্দুস রশিদ জাল দলিল উপস্থাপনের মাধ্যমে এই জমির মলিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। পরে জাল দলিল দিয়ে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে পাল্টা মামলা করেন নজরুল ইসলাম।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) সুহৃদ দে সমকালকে বলেন, কাজী আব্দুল কাদের ১৯৮১ সালে তাঁর সম্পত্তির জন্য আব্দুল রশিদ নামে একজনকে আমমোক্তার নিয়োগ করেন। পরে ওই আমমোক্তারনামা বাতিল না করেই তিনি জমি বেচে দেন। এখন মূল মালিক বা আমমোক্তার কেউই বেঁচে নেই। ফলে আমমোক্তারনামা কার্যত বাতিল হয়ে যায়। তবু একজন নিজেকে আমমোক্তার দাবি করায় সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এজন্য সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সংরক্ষিত বালাম ও রেজিস্ট্রি বইয়ের সঙ্গে দলিল মিলিয়ে দেখা হয়। দেখা যায়, আমমোক্তার দাবিকারীর দলিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা। এর সঙ্গে সম্পত্তির পূর্ববর্তী বায়া মালিক বা মৌজা বা খতিয়ান এবং দাগ কোনোটিরই মিল নেই। দলিলটির দাতা, গ্রহীতা, দলিলের ধরন, মৌজা, তপশিল ও চৌহদ্দির সঙ্গে প্রকৃত নথির তথ্যের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে আব্দুস রশিদ বা তাঁর পূর্ববর্তী মালিক তাহের কাজী ওরফে আবু তাহের কাজী বা কাজী আব্দুল কাদেরের মধ্যে কখনও কোনো দলিল সম্পাদিত হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আমমোক্তার দাবিকারীর নাম-ঠিকানাতেও অমিল রয়েছে। প্রকৃত ব্যক্তির নাম আব্দুল রশিদ, আর বর্তমানে দাবিকারীর নাম আব্দুস রশিদ। প্রথমজনের বাবার নাম আব্দুর রফিক, দ্বিতীয়জনের হাজী আব্দুল কাইউম। ঠিকানা-জন্মতারিখ সবই আলাদা। প্রকৃত আব্দুল রশিদ ৭৩ বছর বয়সে মারা গেলে তাঁকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ-সংক্রান্ত নথিও পাওয়া গেছে। ফলে স্পষ্ট হয়, আব্দুস রশিদ নিজেকে আব্দুল রশিদ পরিচয় দিয়ে জমির মালিকানা দাবি এবং সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছেন।

এদিকে নজরুল ইসলাম ও তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন ফাঁকা জমিতে জোর করে ঘর তুলেছেন আব্দুস রশিদ। সেখানে মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। গত ১৫ জুলাই নজরুল সেখানে উপস্থিত হয়ে এর প্রতিবাদ করলে রশিদ ও তাঁর সহযোগীরা নানারকম ভয়-ভীতি দেখান। এ নিয়ে বেশি কথা বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পিবিআইর তদন্তে হুমকি দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা মিলেছে।

সূত্র সমকাল পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *