জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর ছবি সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডি-অনলাইন ম্যাগাজিন ডটকম
Published 12 feb, 2024, 1.55 pm

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার পর থেকে মোস্তাফিজ ও মামুন পলাতক।

 

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাসিক বলেন, ‘ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষক কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ধর্ষণমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’; ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

 

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তাঁদের বাড়ি আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। তাঁদের বাসায় ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। মোস্তাফিজের সঙ্গে মামুনের পূর্বপরিচয় ছিল। মাঝেমধ্যে মামুন মীর মশাররফ হোসেন হলে মোস্তাফিজের কাছে থাকতেন।

গতকাল সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে আসেন মামুন। তাঁর স্বামী অভিযুক্ত মামুনকে জানান, তাঁরা কিছু আসবাবপত্র কিনবেন। তখন মামুন তাঁকে বলেন, এক আসবাবপত্র দোকানে তাঁর টাকা পাওনা আছে, কিন্তু দোকানদার টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। ওই দোকান থেকে আসবাবপত্র কিনে টাকাটা যাতে মামুনকে দেওয়া হয়।

 

ভুক্তভোগী আরও বলেন, তাঁকে নিয়ে দোকানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর স্বামীর। তাই ফোন করে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন এবং আসার সময় বাসা থেকে মামুনের জন্য কিছু জামা-কাপড় নিয়ে আসতে বলে তাঁর স্বামী। কারণ, মামুন কয়েক দিন ক্যাম্পাসে মোস্তাফিজের কাছে থাকবেন।

এরপর মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। পরে জামা-কাপড় নিয়ে ওই নারী ক্যাম্পাসে এলে তাঁর কাছ থেকে সেগুলো নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন।

এরপর মামুন কক্ষ থেকে ফিরে এসে ওই নারীকে বলেন, তাঁর স্বামী হলের অন্য ফটক (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন, সেদিকে যেতে। পরে তাঁকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে মোস্তাফিজ ও মামুন ধর্ষণ করেন বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘ঘটনাটা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে মোস্তাফিজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত থাকুক, আমরা রাষ্ট্রীয় আইনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *