নিজস্ব প্রতিবেদক বিডি-অনলাইন ম্যাগাজিন ডটকম, Published 25 Aug, 2024,2.55 AM

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা।

কিন্তু তার এই অবস্থা বা পদত্যাগের বিষয়ে নানা আলাপ-আলোচনা তৈরি হয়েছে। সরকারের তরফে এখনো কিছু বলা হয়নি। শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে নীরব। তবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, ৪ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনা জানতে পারেন-ছাত্র আন্দোলন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না।

এরপরও শেখ হাসিনা কোনও অবস্থাতেই পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না। বরং তিনি আরও কঠোরভাবে আন্দোলন দমানোর পক্ষে অনড় ছিলেন। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলে ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত। নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন। উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন।
তাছাড়া বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি। ওইদিন সকালে ছোটবোনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বলেও খবর রটে। এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে চেষ্টা চলছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে। এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না। শেখ হাসিনাকে ধারাবাহিকভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে নানাভাবে জানানো হচ্ছিল। তিনি কারও কথাই কানে তুলছিলেন না বলেও জানা যায়।

পদত্যাগ করতে শেখ হাসিনার সময়ক্ষেপণই জাতির জন্য কাল হয়। অন্যথায় গণভবনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মানুষের ক্ষোভের থাবা কিছুটা কম হতো। ৫ আগস্টের পরিস্থিতি শেখ হাসিনার বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য মোটেই অনুকূল ছিল না। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরাপত্তাবাহিনীর পরামর্শে সেদিন দুপুরে তিনি গণভবনে বসেই তার পদত্যাগপত্রে সই করেন। যা দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পৌঁছানো হয়।

এদিকে হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়েননি। এমনকি আগরতলায়ও যাননি। সম্প্রতি বিমান বাহিনীর ফ্লিটে যুক্ত হওয়া সি-১৩০-জে সুপার হারকিউলেস এয়ারক্রাফ্‌ট-এ চড়ে শেখ হাসিনা সরাসরি দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার আগে গণভবন থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় তাকে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখানে প্রস্তুত ছিল বৃটিশ এয়ারফোর্সে ব্যবহৃত হওয়া আমেরিকান কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড ডগলাসের তৈরি সি-১৩০ জে উড়োজাহাজ। যা আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলেও জানা যায়।

ফ্লাইটে শেখ হাসিনার একমাত্র সফরসঙ্গী ছিলেন তার ছোটবোন শেখ রেহানা। তাদের বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ননস্টপ ফ্লাই করে ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাদের রিসিভ করেন। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রশাসন দ্রুত ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স পাওয়াসহ শেখ হাসিনাকে গ্রহণের অন্যান্য প্রস্তুতিতে প্রধানত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিল বলেও জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *