নিজস্ব প্রতিবেদক বিডি-অনলাইন ম্যাগাজিন ডটকম,Published 21 Nov,2024,1.50 pm
কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।মুনতাহা আক্তার জেরিনকে (৬) আটদিন নিখোঁজ থাকার পর রবিবার ভোর ৪টার দিকে নিজ বাড়ির পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুনতাহা কে হত্যা করেছেন, প্রতিবেশি ও তারই গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার সুমি।
পুলিশ সূত্র বলছে, প্রায় চার মাস আগে মুনতাহার গৃহশিক্ষক হিসেবে শামীমা পড়ানো শুরু করেন। তবে মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই তিনি পড়াতে আসতেন না। পরে মুনতাহার পরিবার তাঁকে পড়াতে মানা করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হন শামীমা। এর মধ্যে মুনতাহাদের পরিবারে কিছু কাপড় হারানোর ঘটনা ঘটে। সেসব কাপড় শামীমাদের বাড়িতে পাওয়া যায়। চুরির অপবাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এসব থেকে শিশু মুনতাহাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা সুমিকে আটক করি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল। তাই মুনতাহার পরিবারকে সুমির বাড়ির দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছিল। আজ ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দেন আলিফজান বিবি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং আলিফজান বিবি ও তার নাতনিকে আটক করি।
মরদেহের গলায় রশি পেঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষত চিহ্ন ছিল জানিয়ে ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সুমি ও তার মা মুনতাহাকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
মুনতাহার চাচা কয়সর আহমেদ দাবি করেন, সুমি পুর্ব শত্রুতার জেরে মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করেছেন। পরে মরদেহটি বাড়ির পাশের ডোবায় কাঁদার নিচে পুঁতে রাখেন। ভোরের দিকে দিকে আলিফজান বিবি মরদেহটি সেখান থেকে পুকুরে ফেলার সময় জনতার হাতে আটক হন।
নিহত মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ বলেন, মুনতাহা নিখোঁজের পরও শামীমা একাধিকবার তাঁদের বাড়িতে এসেছেন। সে সময় তাঁর আচরণে মনে হয়নি তিনি তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একসময় চাঁদা তুলে ঘর বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই উপকারের প্রতিদান হিসেবে আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমি চাই, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।’
শামীম আহমদ বলেন, মুনতাহার কাপড় কাউকে না বলে শামীমা নিয়ে ফেলে দিতেন। কেউ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতেন, এত দামি কাপড় বাচ্চাদের পরানো ঠিক নয়। আবার হারিয়ে যাওয়া কাপড়ও শামীমার ঘর থেকে পাওয়া যেত। এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে শামীমা বলতেন, এসব কাপড় কে নিয়েছেন, তিনি জানেন না।
প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় এক ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে মুনতাহা। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায় সে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই সুমির ঘর-বাড়িতে আগুন দেন। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।